সাজ্জাদুল তুহিন, নওগাঁ: ইসলামি মূল্যবোধের প্রসার ও সংস্কৃতি বিকাশে সারা দেশের ন্যায় নওগাঁয় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এসব মসজিদ পরিচালিত হবে।
মসজিদের ভেতরে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও আলাদা ভাবে নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম সবাই সরকারি রাজস্ব বেতনভুক্ত হবেন বলে জানা গেছে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে চলতি বছরের ১৭ মার্চে সারা দেশে ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে জেলার সাপাহার ও পোরশা উপজেলার দুটি মসজিদ উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছে। এ দুটি মসজিদ নির্মাণকাজ প্রায় শেষ প্রান্তে।
নওগাঁ গণপূর্ত অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ১২টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এরমধ্যে জেলা পর্যায়ে একটি এবং জেলার ১১টি উপজেলায় ১১টি মসজিদ নির্মাণ করা হবে।
জেলা পর্যায়ে মসজিদটি চারতলা বিশিষ্ট হলেও উপজেলা পর্যায়ে থাকা মডেল মসজিদগুলো হবে তিনতলা বিশিষ্ট। প্রায় ১২ হাজার বর্গফুটের জায়গার ওপর জেলা ও উপজেলায় একই আদলে মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে- জেলা পর্যায়ে প্রায় ১৬ কোটি টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ১২ কোটি টাকা।
প্রথম তলায় (গ্রাউন্ড ফ্লোর) থাকবে- ইমামদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গণশিক্ষা অফিস, প্রতিবন্ধীদের জন্য সেন্টার ও নামাজের সুব্যবস্থা, ইসলামিক বুক স্টোর, মরদেহ গোসলের ব্যবস্থা ও পার্কিং ব্যবস্থা।
দ্বিতীয় তলায়- প্রধান নামাজ ঘর। এছাড়া সম্মেলন কক্ষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিস কক্ষ এবং শাহান (উন্মুক্ত জায়গা বিশেষ করে ঈদের নামাজের জায়গা) থাকবে।
এছাড়া তৃতীয় তলায়- পর্যটকদের ভ্রমণসুবিধার কক্ষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের রিসার্চ সেন্টার, ইসলামিক লাইব্রেরি, খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমের থাকার পৃথক ব্যবস্থা, হিফজো ও মক্তোবখানা থাকবে।
থাকবে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা অজু ব্যবস্থা এবং পৃথক নামাজের কক্ষ। এছাড়া অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা সিঁড়ি এবং শিশুদের জন্য শিক্ষাসুবিধা থাকবে।
মুজিববর্ষে উদ্বোধনের তালিকায় থাকা সাপাহার ও পোরশা উপজেলার মসজিদ দুটি নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ প্রান্তে। নির্মাণ শ্রমিকরা দ্রুত গতিতে কাজ করছেন। দ্রুত টাইলস, পলেস্তারাসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।
এদিকে ধামইরহাটে বৈদ্যুতিক খুঁটি, মান্দা ও বদলগাছীতে পুরাতন স্থাপনা এবং মহাদেবপুরে জমি নিয়ে জটিলতা থাকায় এখনো মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। এছাড়া অন্য মসজিদগুলো করোনাকালে রড-সিমেন্ট-পাথরসহ অন্যান্য সামগ্রীর সংকট থাকায় কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এখন পুরোদমে কাজ চলছে।
জেলা শহরের মুক্তির মোড়ে মসজিদটি পাইলিংয়ের কাজ শেষ করে পিলার উঠানোর কাজ চলছে। এছাড়া সদরের তাজের মোড় সংলগ্ন ধুপাপাড়ার মসজিদের গ্রাউন্ড ফ্লোরের কাজ শেষ করে দ্বিতীয় তলার কাজ চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন- টাকা না থাকায় কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
নওগাঁ শহরের তাজের মোড় সংলগ্ন ধুপাপাড়া মডেল মসজিদ নির্মাণের ঠিকাদার ওবায়দুল হক বলেন, যথাসময়ে কাজ শুরু করতে পারলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে না। কারণ কোনো ফান্ড নাই। এ পর্যন্ত প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যেখানে পেয়েছি মাত্র পৌনে দুই কোটি টাকা।
নওগাঁ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ইসলামি মূল্যবোধের প্রসার ও ইসলামি সংস্কৃতি বিকাশের উদ্যেশে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। প্রতিটি মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি আলাদা অফিস থাকবে। এই জায়গাগুলোতে জনবল নিয়োগের ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা এখন পর্যন্ত পাইনি।
তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণ, পুরাতন স্থাপনা থাকা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় এখনো চারটি মসজিদের কাজ এখনো শুরু হয়নি। তবে আগামী মার্চ মাস থেকে কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নওগাঁ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আল মামুন বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে জেলা থেকে দুইটি মসজিদের উদ্বোধন করা হবে। তবে কাজ পূর্নাঙ্গভাবে সম্পূর্ণ হতে আরো প্রায় দুইমাস সময় লাগবে। তার আগে মুসল্লিরা যেন নামাজ পড়তে পারেন মসজিদ দুটি সেভাবে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হবে। আর কাজ একেবারে সম্পূর্ণ হলে পূর্ণাঙ্গভাবে উন্মুক্ত করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ জাতীয় আরো খবর..