মনিরুজ্জামান, নরসিংদী: প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার হিসেবে খ্যাত মাধবদী বাবুরহাট। দেশিয় কাপড়ে সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাবুরহাটকে ঘিরে মাধবদী ও আশপাশ এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড়-মাঝারি মিলিয়ে কয়েক হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান। ফলে ব্যবসা-বানিজ্য নির্ভর শহর হিসেবেই মাধবদী পরিচিত। ১৯৯৪ সালে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী ইউনিয়নকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়।
চতুর্থ ধাপে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হবে মাধবদী পৌর নির্বাচন। নির্বাচনে মাধবদী পৌরসভার ৩২ হাজার ৪৮৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। প্রতিষ্ঠিত হবার পর এবারই প্রথম মাধবদী পৌরসভায় ইভিএমের মাধ্যমে ভোটাররা পৌর পিতা নির্বাচন করবেন। দেশের বৃহত্তম দুটি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীসহ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট চার জন প্রার্থী। নির্বাচনকে ঘিরে পৌরবাসীর মনে প্রশ্ন, কে হচ্ছেন ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহনে মধ্য দিয়ে মাধবদী পৌরসভার প্রথম পৌর পিতা?
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা ইতিমধ্যে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, মাধবদী পৌরসভায় মোট ভোটার ৩২ হাজার ৪৮৩ জন, এর মধ্যে পুরুষ পুরুষ ১৭ হাজার ১৬৫ জন এবং মহিলা ১৫ হাজার ৩১৮ জন। নির্বাচনে ১৫টি ভোট কেন্দ্রে ১০২ টি স্থায়ী এবং অস্থায়ী ১৫ টি ভোট কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তারা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক (নৌকা), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনীত প্রার্থী মাধবদী শহর ছাত্রদলের সদ্য সাবেক আহবায়ক আনোয়ার হোসেন আনু (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মনির হোসেন শামীম (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র একমাত্র মহিলা প্রার্থী ফরিদা ইয়াছমিন (মোবাইল ফোন) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
এছাড়া ১২ টি সাধারণ ওয়ার্ডে মোট ৩৩ জন প্রার্থী কাউন্সিলর এবং ৪ টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে মোট ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সংরক্ষিত ২ নং (৪,৫ ও ৬) ওয়ার্ডে ফরিদা ইয়াছমিন নামে একজন মাত্র প্রার্থী থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হন।
সরেজমিনে মাধবদী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রার্থীদের ছবি এবং প্রতীক সম্বলিত পোষ্টার ছেয়ে গেছে পুরো পৌরসভার এলাকার বিভিন্ন সড়ক , মোড় এবং বাজার। সেই সাথে টানানো হয়েছে ব্যানারও। কুয়াশার চাদরে মোড়া শীতের কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের কাছে। দোয়া ও ভোট প্রার্থনাসহ দিচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি। পাড়া-মহল্লা এবং বিভিন্ন মোড়ে চায়ের কাপে ধোয়া তুলতে তুলতে প্রার্থীদের নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনাসহ ভোটের হিসাব-নিকাষ। সব মিলিয়ে মনোহরদী পৌরসভার নির্বাচনী গরম হাওয়া মাঘের শীতকে পরাজিত করেছে বলে অনেকে মনে করেন।
আসন্ন পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাধারণ ভোটাররা ভাবছেন উন্নয়নের কথা । পৌর উন্নয়ন আর সাধারণ নাগরিক সুবিধা যাদের কাছ থেকে পাবে তাদেরকেই তারা ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন ।
এ বিষয়ে ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান জানান, উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে, সন্ত্রাস, চাদাবাজ ও মাদক মুক্ত পৌরসভা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং সুখে দুঃখে যাকে কাছে পাবো তাকেই আমরা ভোট দিব।
এদিকে ভোটারদের চাহিদা অনুযায়ী পৌরবাসীর নাগরিক অধিকার দিতে প্রতিশ্রুতির কথা দিয়ে ভোট চাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীগণ।
মাধবদী পৌরসভায় মেয়র পদে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩ জন প্রার্থীর সরব উপস্থিত, গণসংযোগ, উঠান বৈঠকসহ প্রচারণায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেলেও স্বতন্ত্র থেকে একমাত্র মহিলা প্রার্থী ফরিদা ইয়াছমিনকে কোন প্রচার-প্রচারণায় দেখা যায়নি। এমনকি কোথাও তার পোস্টারও নজরে আসেনি।
দলীয় মনোনয়নের পূর্বে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের একটি অংশ মেয়র মানিকের বিরুদ্ধাচরণ করে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চেয়েছিল। বর্তমানে তাদের বেশ কয়েকজন মানিকের সাথে একই মঞ্চে নৌকার পক্ষে উঠান বৈঠক করতে দেখা গেছে। নৌকার জন্য এটা শুভ লক্ষণ বলছেন অনেকে। ধারণা করা হচ্ছে যারা এখনও অভিমান করে দূরে সরে আছে কয়েকদিনে মধ্যে তাদেরকেও নৌকার পক্ষে কাজ করতে দেখা যাবে।
অপরদিকে ক্ষমতাশীন আ’লীগের মত বিএনপিতেও রয়েছে বিভক্তি। তবে মান-অভিমানকে দূরে ঠেলে দলীয় স্বার্থে সকল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এক যোগে ধানের শীষের হয়ে কাজ করলে অপেক্ষকৃত বিএনপির নবীন ও তরুন প্রার্থী হলেও নেহায়েত তারাও কম যাবেনা। কেননা বিএনপির ভোট ব্যাংক হিসেবে এক সময় পরিচিত ছিল জেলার এই দক্ষিণাঞ্চল মাধবদী।
আ’লীগ থেকে মনোনীত বর্তমান মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক বলেন বলেন, ‘বিগত পাঁচ বছর আমি মাধবদী পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছি। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড ১৯ এ লকডাউনের সময় কর্মহীন অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। এবারও নির্বাচনে বিজয়ী হলে উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখব ইনশাআল্লাহ। সেই সাথে আমার অসম্পূর্ণ কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে মাধবদী পৌরবাসীর কাছে আরেকবারও তাদের রায় চাচ্ছি। যাতে করে পৌরবাসীকে একটি মায়াময় মাধবদী উপহার দিতে পারি। ’
বিএনপি থেকে মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, মাধবদী বিএনপি ঘাটি পুরো নরসিংদীবাসী জানে। সেক্ষেত্রে ধানের শীষের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত মাধবদীতে অবাধ এবং সুষ্ঠ নির্বাচন হলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত।
ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মনির হোসেন শামীম বলেন, আমরা আমাদের মত করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। ভোটারদের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছি বেশ।
মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত দূর্বল প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের সাথে নির্বাচনী মাঠে বেশ সুবিদা জনক অবস্থানে আছেন ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক। অনেকেই মনে করেন নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে মানিককে তেমন কোন বেগ পেতে হবেনা। প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী হিসেবে যারা নির্বাচন করছেন তাদের তুলনায় মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক অনেক দক্ষ,যোগ্য ও মাধবদী পৌরবাসীর অত্যন্ত আস্থাভাজন। তাই তার বিজয় শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র বলেও মন্তব্য করেন তারা।
এ জাতীয় আরো খবর..