অমর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরির উদ্যোগে রবিবার(২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরির মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড. ঢাকা, প্রক্তন চেয়ারম্যান প্রফেসর তাসলিমা বেগমের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এর সদস্য (যুগ্ন সচিব) শাহনওয়াজ দিলরুবা খান। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইডিয়াল টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ আবদুস সামাদ ও প্রগতি ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড কনসালটেন্ট প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার বনিক। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, মোহাম্মাদ তারেকউজ্জমান খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাহনওয়াজ দিলরুবা খান প্রথমেই সকল ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তাদের বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সহ পশ্চিমবঙ্গ তথা সমস্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও সুপরিচিত। বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহীদ হন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকত সহ অনেকেই। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।
এছাড়াও তিনি আরও বলেন, বঙ্গীয় সমাজে বাংলা ভাষার অবস্থান নিয়ে বাঙালির আত্ম-অম্বেষায় যে ভাষাচেতনার উন্মেষ ঘটে, তারই সূত্র ধরে বিভাগোত্তর পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভাষা-বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চে এ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয় এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তার চরম প্রকাশ ঘটে।
সভপতির বক্তব্যে প্রফেসর তাসলিমা বেগম সকল ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে তিনি অনুষ্ঠানে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্পর্কে আলোচনা কালে ১৯৪৮ সালের মার্চে এ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয় এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তার চরম প্রকাশ ঘটে। ঐদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ কয়েকজন ছাত্রযুবা হতাহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরা প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে।
তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করে। ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়। একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি।
১৯৮৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন বিল’ পাশ হয়। যা কার্যকর হয় ৮ মার্চ ১৯৮৭ সাল থেকে।
উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি কর্তৃক আয়োজিত রচনা, চিত্রাংকন ও হাতের সুন্দর লেখা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও সনদ পত্র বিতরন করা হয়।