রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি করে দিয়েছেন। গতবারের মতোই এই কমিটির সদস্যদের দেওয়া নাম থেকে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন।
রাষ্ট্রপতি মনোনীত একজন নারীসহ দুজন বিশিষ্ট নাগরিককে অনুসন্ধান কমিটিতে রাখা হয়েছে। তবে প্রথমবারের মতো সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে সম্প্রতি পাস হওয়া ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন’ অনুসারে এই অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে অনুসন্ধান কমিটির প্রধান করা হয়েছে। তিনি গতবারের সার্চ কমিটির সদস্য ছিলেন। কমিটির অন্য পাঁচজন হলেন—হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন।
অনুসন্ধান কমিটি গঠন সম্পর্কে গতকাল তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহ্মুদ বলেছেন, ‘আমি মনে করি, সুন্দর একটি অনুসন্ধান কমিটি হয়েছে, তাদের মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশন দিয়ে বাংলাদেশে একটি সুন্দর জাতীয় নির্বাচন হবে, যেমনটি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে হয়েছে। ’
অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যা বললেন
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান গতকাল কালের , ‘সংবিধান ও আইন অনুযায়ী এই কমিটি কাজ করবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে এই কমিটির সুপারিশ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। ’
অনুসন্ধান কমিটি কবে বৈঠকে বসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে রবিবার (আজ) বা সোমবার প্রথম বৈঠক করব। ’ রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনের কাছ থেকে নাম চাওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নাম চাইব কি না এ সিদ্ধান্তটি সবাই বসে নিতে হবে। আমার আগের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, আমি আগেও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও অন্যদের কাছ থেকে নাম নিয়েছি। কমিটির সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’
ইসি গঠন আইন অনুসারে, অনুসন্ধান কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হবে। তিন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম গঠিত হবে। কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের সুপারিশ করবে। প্রতিটি পদের বিপরীতে কমিটি দুটি নাম দেবে।
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ রয়েছে আর আট দিন। এর মধ্যে কার্যদিবস রয়েছে মাত্র ছয় দিন। সে ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কমিটি এবার আইন নির্ধারিত ১৫ কার্যদিবস সময় নিলে সিইসি ও অন্য কমিশনারদের পদ কিছুদিন শূন্য থাকতে পারে।
এর আগে আইন না করেই ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের উদ্যোগে গঠন করা হয় প্রথম অনুসন্ধান কমিটি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের ওই কমিটিকে ১০ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়।
গতবার অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয় ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি। আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে অনুসন্ধান কমিটির প্রধান করা হয়। অনুসন্ধান কমিটির কাছে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ২৫টি দল ১২৫ জনের নামের তালিকা দেয়। সেই তালিকা থেকে ওই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি গঠন করা হয়।
বিএনপির আগ্রহ নেই : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অনুসন্ধান কমিটি কেমন হলো, কারা এলো—এসব নিয়ে আমাদের আগ্রহ নেই। সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে যে নীলনকশা গ্রহণ করেছে, তারই অংশ এই অনুসন্ধান কমিটি ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন। এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না, এটা অনেকবার প্রমাণ হয়েছে। তাই আগে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ’
এর আগে দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদও বলেন, নির্বাচন কমিশন দিয়ে কী হবে, তাদেরকে তো পরিচালনা করে সরকার। নির্বাচন কমিশন তখনই কার্যকর হবে, যখন একটি নিরপেক্ষ সরকার হবে।
আপত্তি নেই জাতীয় পার্টির : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমপি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে দুজন সদস্যের নাম প্রস্তাব করেছেন, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে এই অনুসন্ধান কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠনে কাদের নাম প্রস্তাব করবে, তা দেখার অপেক্ষায় পুরো জাতি। ’
দলীয় অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কমিটি : কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম এক বিবৃতিতে বলেন, সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে সরকার তাদের দলীয় অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়।